৯ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার, রাত ১:৪৮

আদালত পাড়ায় চলছে ভাঙ্গা-গড়ার রাজনীতি

প্রাইমনারায়ণগঞ্জ.কম

প্রাইম নারায়ণগঞ্জ:

নারায়ণগঞ্জে আ.লীগ ও বিএনপির মূল দলসহ অঙ্গসংগঠনগুলোতে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে আসছেন আইনজীবীরা। গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবীতে আসীণ হয়েছেন অনেকে, বলতে গেলে দুটি দলেরই অন্যতম ভরসার স্থল আদালতপাড়া। তবে অনেকদিন ধরেই ভরসার এ স্থলে চলছে ভাঙ্গা-গড়ার রাজনীতি। আ.লীগ-বিএনপি দুটি দলই বিভক্ত হয়ে পড়ছে কয়েকটি ভাগে এমনটাই জানান সাধারণ আইনজীবীরা।

সাধারণ আইনজীবী ও আ.লীগ-বিএনপি পন্থী আইনজীবীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, আদালত পাড়ায় বর্তমানে আইনজীবীরা ৬টি ভাগে বিভক্ত হয়ে আছেন। এর মধ্যে আওয়ামীলীগের ৩টি ও বিএনপির ৩টি বলয় রয়েছে বলে জানায় তারা। আওয়ামীলীগের এতোদিন সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট আনিসুর রহমান দিপুর নেতৃত্বে একটি বলয় ও এড. হাসান ফেরদৌস জুয়েল এবং এড. মোহসীনের নেতৃত্বে অপর বলয়টি থাকলেও এবার জুয়েল ও মোহসীন দুটি আলাদা ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন বলে জানায় আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা।

বিএনপিতে প্রথমদিকে বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এড. তৈমুর আলম খন্দকার ও মহানগর বিএনপির সভাপতি এড. আবুল কালামের নেতৃত্বে পৃথক পৃথক দুটি বলয় থাকলেও বর্তমানে এ দুটি বলয়কে পিছনে ফেলে সামনের দিকে চলে আসে মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খানের নেতৃত্বাধীণ বলয়।
বিএনপির দলীয় সুত্রে জানা যায়, আদালতপাড়ায় এক সময় দাপুটের সাথে রাজনীতি করা নেতাদের মধ্যে অনেকে ঠাই করে নিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে। কেউ হয়েছে দলীয় প্রধানের উপদেষ্টা কেউবা আবার পেয়েছেন দলীয় প্রতীক ধানের শীষে নির্বাচন করার সুযোগ। এছাড়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে নির্বাচিতও হয়েছেন অনেকে।

আওয়ামীলীগের দলীয় সুত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় জাতীয় পরিষদে জায়গা করে নিয়েছেন আওয়ামীলীগের একজন সিনিয়র আইনজীবী, অনেকে আবার জেলাভিত্তিক বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছে। পেয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদ-পদবী, অনেকে আবার আছেন আসন্ন বিভিন্ন কমিটিগুলোতে বড় বড় কয়েকটি পদ-পদবীর আসায়।

এদিকে আদালতপাড়া সুত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ আইনজীবি সমিতি গঠনের পর থেকে প্রথমে রাজনীতি খুব একটা না থাকলেও যতটুকু ছিলো তার সবই আদালতপাড়া কেন্দ্রীক। ধীরে ধীরে উভয় দলের আইনাঙ্গনের নেতারা আদালতের বাইরে গিয়েও রাজনীতিতে দেখিয়েছেন নানা চমক। জেলা-মহানগরসহ কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আ.লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হতে থাকে আইনজীবী নেতারা। এরই ধারাবাহিকতায় জেলা বিএনপির সভাপতি হন এড. তৈমুর আলম খন্দকার পরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হন। মহানগর বিএনপির সভাপতি ও ৩ বার সাংসদ নির্বাচিত হন এড. আবুল কালাম, পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় কমিটিতেও স্থান পান তিনি। ২০১৬ সালের নাসিক নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, সর্বশেষ তিনি মহানগর বিএনপর সহ-সভাপতির দায়িত্বও পান।

অপরদিকে, শহর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক থেকে জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন শেষে বর্তমানে আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন এড. আনিসুর রহমান দিপু। এড. খোকন সাহা ২৬ বছর ধরে আছেন মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে। এড. হাসান ফেরদৌস জুয়েল আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি হয়েছেন জেলা তাতীলীগের সভাপতি। এছাড়াও বর্তমান আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. মোহসীন মিয়া আছেন জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্বে।

সাধারণ আইনজীবীরা জানায়, একটা সময় আদালতপাড়ায় খুব একটা রাজনীতি দেখা না গেলেও বর্তমানে আদালত পাড়ায় কর্তৃত্ব নেয়ার রাজনীতি শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিগত ৪-৫ বছর যাবৎ বেশ কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে আইনজীবী নেতারা। ফলে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে আ.লীগ-বিএনপির আইনজীবীদের মাঝে।

আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের মতে, তিন থেকে চার বছর আগে আ.লীগে এ ভাঙ্গনের শুরু হয় বলে জানায় আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। তৎকালীণ সময়ে বারের সভাপতি ছিলেন এড. দিপু এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এড. মুজাহিদ আল পলু। পরবর্তী নির্বাচনে এড. পলুকে সরিয়ে সাধারণ সম্পাদক করা হয় এড. হাসান ফেরদৌস জুয়েলকে। তখন থেকেই আওয়ামী আইনজীবী রাজনীতিতে ভাঙ্গনের শুরু হয়। এ সময়কালেই আইনজীবীদের এক অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান ঘোষণা দেন আইনজীবী সমিতির পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক হবেন এড. মোহসীন। এ ঘোষণার পর থেকেই প্রকাশ্যে আসতে থাকে আইনজীবীদের কোন্দল। এর বিরোধীতা করেন এড. দিপু ও এড. খোকন সাহা। পরে শামীম ওসমানের মধ্যস্থতায় সভাপতি হন এড. জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক হন এড. মোহসীন। ফলে আইনজীবী নেতাদের মধ্যবর্তী দূরত্ব আরো বাড়তে থাকে, তীব্র হতে থাকে দলীয় কোন্দল। তারা দুই বছর দায়িত্ব পালন করা পর বারের নিয়ম অনুসারে এ নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে না পারায় এড. জুয়েলের সমর্থন নিয়ে এড. মোহসীন – এড. মাহবুব হন বারের পরবর্তী সভাপতি-সেক্রেটারী। কিন্তু এ জুটির এক বছর না পেরোতেই তাদের সমর্থনকারী এড. জুয়েলের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন বলে জানায় আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। ফলে আওয়ামী আইনজীবীদের রাজনীতিতে বর্তমানে ৩ টি বলয় সক্রিয় রয়েছে যা আগামীতে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে দলের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে বলে মনে করে সাধারণ আইনজীবীরা।

বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মতে, এড. তৈমুর আলম খন্দকার ও এড. আবুল কালামকে কেন্দ্র করে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মাঝে বিবাদমান দ্বন্দ বেশ পুরোনো। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নতুন বলয় হিসাবে শক্তির আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছে এড. সাখাওয়াত হোসেন খান ও তার পক্ষের বিএনপির আইনজীবীরা। জানা যায়, সংসদীয় নির্বাচন সহ আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ও আইনজীবী ফোরামের কর্তৃত্ব নিয়ে প্রায় সময়ই আইনজীবীরা বিভক্ত থাকতো তৈমুর ও কালাম বলয়ে। কিন্তু সেভেন মার্ডার ঘটনার পর থেকেই আদালত পাড়ায় পাল্টে যেতে থাকে বিএনপির রাজনীতির দৃশ্যপট। সেভেন মার্ডারের ক্ষমতাবান আসামীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে জেলা থেকে শুরু করে দেশব্যাপী আলোড়ন তুলেন এড. সাখাওয়াত হোসেন খান। সেই থেকে শুরু তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। বর্তমানে তার নেতৃত্বে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা ধীরে ধীরে একাট্টা হতে শুরু করেছে বলে জানায় সাখাওয়াতপন্থী আইনজীবীরা। সর্বশেষ আইনজীবী ফোরামের সদস্য ফরম নবায়ন করতে গিয়ে দেখা যায়, এড. তৈমুরের বলয় থেকে ৮৬ টি এবং এড. সাখাওয়াতের বলয় থেকে ১৫২ টি ফরম নবায়ন করা হয়।

বাছাইকৃত সংবাদ

No posts found.